এবার নিম্নচাপের রেশ কাটতে না কাটতেই বঙ্গোপসাগরে আবারও একটি লঘুচাপ তৈরির আভাস পাওয়া গেছে। এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা। সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেয়া হয়েছে ‘ডানা’। এটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিলোমিটার গতিতে বাতাসের শক্তি নিয়ে দেশের স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
গতকাল শনিবার (১৯ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেয়া এক পোস্টে এমন তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক এই পিএইচডি গবেষক। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ভারতের ওড়িশা রাজ্য ও বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার মধ্যবর্তী যেকোনো উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ আঘাত হানতে পারে।
এদিকে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানলে এর বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার। পাশাপাশি এটি যদি প্রতিবেশী দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উপকূলে আঘাত হানে তবে এর গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার।
তবে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা যদি বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলে আঘাত করে তবে এর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। এছাড়া এটি যদি বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের উপকূলে আঘাত করে তবে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার হতে পারে।
অন্যদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’ আঘাত হানলে জলোচ্ছ্বাসের সম্ভব্য উচ্চতা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি জানান, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, ও বাগেরহাট জেলায় স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা ৫ থেকে ৮ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা ২ থেকে ৫ ফুট বেশি (ভাটার সময়) জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। পাশাপাশি বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলায় স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ১ থেকে ৩ ফুট বেশি (ভাটার সময়) জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ২ থেকে ৩ ফুট বেশি (ভাটার সময়) জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। আর সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে কক্সবাজারে স্বাভাবিক সময় অপেক্ষা ২ থেকে ৪ ফুট বেশি (জোয়ারের সময়) ও স্বাভাবিক সময়ে অপেক্ষা ১ থেকে ৩ ফুট বেশি (ভাটার সময়) জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
পলাশ জানান, আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৩ অক্টোবর মধ্যরাতের পর থেকে ২৪ অক্টোবর মধ্যরাতের মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের উপকূলে আঘাত করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এটি প্রায় একই পথে অগ্রসর হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে যে পথে ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ স্থলভাগে আঘাত করে অগ্রসর হয়েছিল। অর্থাৎ, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ডানা পশ্চিমবঙ্গের মেদনিপূর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা এবং বাংলাদেশের সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে।